মহাকাশ গবেষণায় এবার জাতীয় পর্যায়ে জিতলো মহেশখালীর ৭ ক্ষুদে বিজ্ঞানী





এস এম আপেল •

মহাকাশ নিয়ে গবেষণায় একের পর এক অকল্পনীয় বিজয়ের তকমা ছিনিয়ে আনছে মহেশখালীর ক্ষুদে বিজ্ঞানী খ্যাত সিরাজুল মোস্তফা আপেল। কক্সবাজারে নতুন প্রজন্মের ১১জন ক্ষুদে শিক্ষার্থীকে উন্নত প্রযুক্তির দিকে আগ্রহী করে তুলে জেলা শহরের জেলা পাবলিক লাইব্রেরি শহীদ সুভাষ হলে বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের 'এস্ট্রনট ক্যাম্প' অনুষ্ঠান থেকে ক্ষুদে ১১জন শিক্ষার্থীর সকলেই পায় সফলতা। এবার জাতীয় পর্যায়ে হতে জয় ছিনিয়ে আনার পেছনে বা আড়ালের নায়েকের নেতৃত্ব দিয়েছে আপেল।

ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম এবং স্পেস ইনোভেশন ক্যাম্পের যৌথ উদ্যোগে এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগীতায় ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ের 'এস্ট্রনট ক্যাম্প' অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে শত শত শিক্ষার্থীকে টপকিয়ে জয়ী হলো মহেশখালী ৭ ক্ষুদে বিজ্ঞানী। বিজয়ীরা সকলে শিক্ষার্থী। গত ২৮ ও ২৯ জুন রাজধানী ধানমন্ডিতে অবস্থিত ৭১ মিলনায়তনে ২দিন ব্যাপী চলে এ গবেষণা সেমিনার। এ সেমিনারে ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্কুল থেকে ৪ থেকে ১৬ বছর বয়সি ৩০০ শিক্ষার্থী কৃতিত্ব অর্জন করে। তারমধ্যে ৭জন মহেশখালী উপজেলার।

মহেশখালীর ৭ বিজয়ীরা হলেন- ছনখোলা পাড়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্র আব্দুল্লাহ আল অপু,(স্যাটেলাই ডিজাইন) কালারমার ছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর মোজাহিদ হোছাইন আজমীর, (স্যাটেলাই ডিজাইন) হোছাইন মোহাম্মদ সাগর, (স্যাটেলাইট ডিজাইন) গোরাকঘাটা আয়েশা ছিদ্দিকা বালিকা মাদ্রাসার ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী রামিছা বিনতে বশর, (মুন ল্যান্ডার) আঁধার ঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর শেখ আসাব উদ্দিন, (মুন ল্যান্ডার) কালারমারছড়া আল আমিন মডেল একাডেমির প্রথম শ্রেণীর আলিফ আল তৈয়ব আয়াত(মুন ল্যান্ডার) ও তৃতীয় শ্রেণীর মারুয়া মিন্নাত সোহান (মুন ল্যান্ডার)।

দুই দিন ব্যাপী মহাকাশ গবেষণার আয়োজনে ছিলো- এপোলো মিশন নিয়ে ইন্টারেক্টিভ সেশন যা স্পেস ইনোভেশন ক্যাম্প এর ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। আলোচনা করা হয় চাঁদে অবতরনের বিভিন্ন দিক নিয়ে। একই সাথে গবেষণায় অংশ নেয়া ২৪টি টীমে বিভক্ত হয়ে তৈরি করেছে স্পেস রোবট, মুন-ল্যান্ডার, ওয়াটার রকেট এবং ক্যান স্যাটেলাইট। প্রতিটি ওয়ার্কশপ এর জন্য একজন অভিজ্ঞ মিশন কন্ট্রোলার এবং একজন এসিস্ট্যান্ট মিশন কন্ট্রোলার ছিল, যারা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সৃজনশীল কার্যক্রম এবং কর্মশালার মাধ্যমে তাদের প্রজেক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা প্রদান করে।

এবারের বিজয় নিয়ে ক্ষুদে বিজ্ঞানী সিরাজুল মোস্তফা আপেল জানান- নানা প্রতিবন্ধকতার চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আমরা মহাকাশ গবেষণা নিয়ে কাজ করছি। ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মহাকাশ ও উন্নয়ন প্রযুক্তি সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলতে চেষ্টা করছি। এ ধারা অব্যাহত থাকবে। জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ নিয়ে আপেল বলেন- প্রথমে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বিবেচনা করে বাছাই পর্ব শেষ করি আমরা, এরপর সেমিনারের মাধ্যমে মহাকাশের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর একটি সভা করে অংশগ্রহণকারীদের থিওরিক্যাল প্রশ্নের মাধ্যমে ফের মেধা চর্চার যাচাই করি। সবশেষে কেন্দ্রীয়ভাবে তাদেরকে চুড়ান্ত পর্যায়ের জন্য মনোনীত করি। এ যাত্রায় সহযোগীর সারথি হিশেবে কক্সবাজার-২ আসনের এমপি আলহাজ আশেক উল্লাহ রফিক ও উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক তারেক বিন ওসমান শরীফ পাশে থাকার কথা বলেছেন আপেল। সহযোগীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান আপেল।

ড্যাফোডিল ফ্যামিলি গ্রুপের সিইও মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন- এই ধরনের আয়োজন আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি তাদের আগ্রহ এবং জ্ঞানার্জনের ইচ্ছা বৃদ্ধি পাবে। আমরা আশা করি, এই অভিজ্ঞতা তাদের সৃজনশীলতা ও গবেষণার প্রতি মনোযোগ আরও গভীর করবে এবং ভবিষ্যতে তাদেরকে মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নেতৃত্বদানকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করবে।"

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল প্রধান শিক্ষক ডঃ মোঃ মাহমুদুল হাসান বলেন, "আমাদের স্কুল সবসময়ই শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করে। এই ক্যাম্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করেছে যা তাদের শিক্ষা জীবনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।"

বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের প্রেসিডেন্ট ও নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেন্স বাংলাদেশের উপদেষ্টা আরিফুল হাসান অপু বলেন, “এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য হলো শিশু-কিশোরদের মধ্যে মহাকাশ বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা এবং কৌতূহল জাগানো। আমরা আশা করি, এই ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে তারা ভবিষ্যতে মহাকাশ গবেষণায় নিজেদের উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়তে অনুপ্রাণিত হবে। আয়োজনটিতে নলেজ পার্টনার হিসেবে ছিলেন ক্রিয়েটিভ জুনিয়র, টেক পার্টনার ড্রিমার্জ ল্যাব এবং রোবাস্ট রিসার্চ এন্ড ডেফেলপমেন্ট লিমিটেড, ই-টিকেটিং পার্টনার ই-সফট, এছাড়াও সহযোগীতায় ছিলেন সায়েন্টিফ্লাই এবং ৩৬৯ –অসটক। আরো উপস্থিত ছিলেন বিমান বাংলাদেশ ইয়ারলেন্স কর্মকর্তা।

0/একটি মন্তব্য / মন্তব্য পোস্ট করুন